আইফোনের দাম এত বেশি কেন এমন কি এর সিক্রেট

আইফোনের সিক্রেট কি! বিশ্বজুড়ে মুঠোফোনের দুনিয়ায় রাজত্ব করছে টেক জায়ান প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। আইকন নতুন মডেলের অপেক্ষায় থাকেন পৃথিবীর কোটি কোটি প্রযুক্তিপ্রেমী।

আইফোনের সিক্রেট কি

বছরে মাত্র কয়েকটি সংস্করণের মুঠোফোন বাজারে আনলেও মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় স্টোক। নতুন ডিজাইনের ফোন হাতে পেতে অ্যাপল স্টোরের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। দোকান খুলবে দশটায় অথচ ভোর থেকেই লম্বা লাইন দিতে দেখা গিয়েছে অ্যাপলের আইফোন স্টোরের সামনে। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এত জনপ্রিয় iphone ।  বাজারে থাকা মুঠোফোনের সঙ্গে তুলনা করলে বিস্তর ফারাক দেখা যায়। এরপরও iphone কেনার জন্য সবাই কেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আইফোনের জনপ্রিয়তার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে আজকের পোস্টটিতে।

আইফোনের উন্নত মানের নকশা

অনন্য নকশার ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের কারণে যেকোন মুঠোফোন থেকে সহজেই চিনে ফেলা যায় iphone কে। নজর কারা চাকচিক্য তো রয়েছেই।সেই সাথে রয়েছে একটি মাত্র বাটোন। এই বাটোন দিয়েই আইফোনের নিজস্বতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানটি।এই একটি মাত্র বাটোন দিয়ে ফোনের যে কোন মেনুতে প্রবেশ করা যায়।  অন্যান্য ফোনে বিশেষ করে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ফোনে একাধিক বাটোন থাকে। অনেকের কাছেই এই একাধিক বাটোন বাড়তি ঝামেলার। তাছাড়া আইফোনের গ্রাফিক্স অর্থাৎ ফোনে প্রবেশ করে যেসব অভিজ্ঞতা একজন গ্রাহক নেন তাও অন্য যেকোনো ফোনের চেয়ে আলাদা।

আইফোনের বাইরের নকশার পাশাপাশি ভিতরে কিভাবে চলছে সেই নকশার উপরেও জোর দেয় প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই কোটি কোটি প্রযুক্তি প্রেমিকের মন কেড়ে নিয়েছে আইফোন। সফটওয়্যারও পলিস্ট স্মুথ, একটি অভিজ্ঞতা পান একজন ব্যবহারকারী। প্রযুক্তিপ্রিয় মানুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছেোও এপেলের এমন ডিজাইন মুগ্ধতার প্রতীক বলা যায়।

 সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা

ডিজিটাল এই যুগে প্রায়ই ব্যক্তিগত তথ্য সহ অনেক গোপনীয় তথ্য সহজেই সামাজিক মাধ্যম সহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে একজন আইফোন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া এত সহজ নয়। বরাবরই নিজের প্রোডাক্টগুলোতে নিরাপত্তার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে আসছে অ্যাপল। আইফোনও এর ব্যতিক্রম নয়। আর একজন হ্যাকার চাইলেই সহজেই একজন আইফোন ব্যবহারকারীর তথ্য হ্যাক করতে পারবেন না।

আইফোন হ্যাক করা বা অনুমতি ছাড়া iphone এর ডাটা বের করা আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর মত সুদক্ষ একটি সংস্থা কয়েক বছর আগে এক সন্দেহ ভাজনের আইফোনের লক খোলার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত খুলতে না পেরে অ্যাপেলের দারত্ব হয় এফবিআই। তবে আরও মজার ব্যাপার হল অ্যাপল কর্তৃপক্ষ সেই লক কিন্তু খুলে দেয়নি। অর্থাৎ তারা একজন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর অ্যাপলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার এই বিষয়টির কারণেই মুঠোফোন প্রেমীদের পছন্দের প্রথম দিকে অ্যাপেলে।

 মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ বলা হয় অ্যাপলের আই ও এফ কে।  আবার এন্ড্রয়েড ফোনে খুব সহজে থার্ড পার্টি অ্যাপ ঢুকে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তবে অ্যাপলের অ্যাপ শুধুমাত্র অ্যাপেল স্টোর থেকেই ইন্সটল করা যায়। যে কারণে গড়পোত্তা ভাইরাস বা মেইল ওয়ারের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে একেবারেই কম। এছাড়াও আইফোন হারিয়ে গেলে ফাইন্ড মাই অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই হারানো আইফোনের লোকেশন খুঁজে বের করা যায়।

 নিজস্ব হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার

অন্য সব মুঠোফোন যেখানে তৃতীয় পক্ষের হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেখানে নিজেরাই হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার বানায় অ্যাপল। প্রসেসর, বডি, ক্যামেরা সব কিছুই অ্যাপলের নিজস্ব। তাই ব্যবহারকারীর চাহিদা মাথায় রেখে গুণগত মানের সঙ্গে কোন অংশেই ছার দিতে রাজি নয় অ্যাপল। অ্যাপলের এই বৈশিষ্ট্য জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।

অপারেটিং সিস্টেম নতুনত্ব ও চমক

একটি আইফোন বা স্মার্ট ফোন দিয়ে কথা বলা থেকে শুরু করে আধুনিক দুনিয়ার প্রযুক্তিগত প্রায় সব কাজ করা গেলেও আইফোনের জনপ্রিয়তার আরেকটি বড় কারণ আইফোনের নিজস্ব যে অপারেটিং সিস্টেম সেটিতে নতুনত্ব সংযোজন। আর এই ফিচারটির কারণেই মূলত নতুন সিরিজের আইফোনের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন অ্যাপেল প্রেমিরা। আইফোনের প্রতিটি নতুন অপারেটিং সিস্টেমে নিত্যনতুন সব চমক থাকে। OF এ কিছু গোপন ফিচার দিয়ে অ্যাপল সব সময়ই iphone ব্যবহারকারীদের চমক উপহার দিয়ে আসছে।

 অ্যাপল ইকোসিস্টেম

অ্যাপল ইকোসিস্টেম হল একাধিক অ্যাপল ডিভাইস যুক্ত একটি পরিবেশ। যেখানে একাধিক অ্যাপল ডিভাইস একসঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন এর ব্যবহারকারীরা। যেমন একজনের কাছে যদি অ্যাপলের আইফোন ও ম্যাট বুক থাকে সেক্ষেত্রে এই দুইটি ডিভাইসের মধ্যে ফাইল আধান প্রদান করা একেবারেই সহজ। এমন কি আইফোনে কল আসলে ম্যাট বুকে কাজ করা অবস্থাতেও ম্যাকবুক থেকে কল রিসিভ করে কথা বলতে পারবেন একজন ব্যবহারকারী। অ্যাপল ওয়াচ বা অ্যাপলের স্মার্ট হাতঘড়ির ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। অ্যাপলের তৈরি এই অসাধারণ ইকোসিস্টেমের কারণে প্রতিটি অ্যাপল ডিভাইস একটি আরেকটি সঙ্গে খুব ভালোভাবে কাজ করে। এই অ্যাপল ইকোসিস্টেম ব্যবহারকারীর জীবনকে সহজ করে দেয় এ কারণেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আইফোন।

বিক্রয়োত্তর সেবা

অ্যাপলের ডিভাইস বা আইফোন কিনার বছরের পর বছর হয়ে গেলও অ্যাপল সার্ভিস সেন্টার থেকে খুব সহজে বিক্রয় উত্তর সেবা পাওয়া যায়। যার ফলে আইফোনের সমস্যা দেখা দিলেও অ্যাপল সার্ভিস সেন্টার থেকে যে কোন সময় সমাধান সম্ভব। শুনতে অবাক করা হলেও এটাই সত্য যে ২০১৫ সালে বের হওয়া আইফোন ৭ ব্যবহারকারীরা এখনো নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট পান। অনেক বছর ধরে আপডেট পাওয়ায় পুরনো মডেলের ফোনগুলো নতুন নতুন সব ফিচারের ছোঁয়া পেয়ে নতুনের মতই কাজ করে।

আইফোনের দাম এত বেশি কেন

প্রথমত iphone যে অপারেটিং সিস্টেমে চলে সেটি তাদের নিজেদেরই বানানো। অন্যান্য মুঠোফোন কোম্পানিগুলো android বা অন্য কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে যে কারণে তাদের খরচও কম পড়ে।

তবে অ্যাপল নিজস্ব অয়েজ ব্যবহার করার পাশাপাশি নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে অনেক বেশি খরচ করে। যে কারণে ফোনের দামও বেড়ে যায়। আবার অ্যাপলের প্রসেসরও নিজেদের বানানো যা অন্য সব কোম্পানির চিপছের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে। অ্যাপল সরবরাহকারীদের কাছ থেকে বেশির ভাগ সময় সবচেয়ে ভালো স্যাম্পল নেওয়ার চেষ্টা করে। যা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কারণে বছরে বিপুল অংকের অর্থ ঢালে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি হয় আইফোন।

তাছাড়া ফ্লাক শিপ প্রোডাক্ট হওয়ায় অ্যাপলের পণ্যের ডোমেন্ট হাইয়েন্ট।অর্থাৎ মধ্যম বা নিম্নমানের থেকে যেসকল পণ্য প্রতিযোগিতা করে তা অনেকটা কাছাকাছি দামের। যেমন google পিক্সেল ফোর এর দাম আইফোনের খুবই কাছাকাছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top