লোহার ফুসফুস নিয়ে বেঁচে আছেন ৭০ বছর হয়েছেন বিখ্যাত আইনজীবী

আয়রন ফুসফুস নিয়ে বেঁচে আছেন যারা! বিজ্ঞানের সাক্ষাৎ বিস্ময় পলস আলেকজান্ডার প্রায় পুরো জীবনটাই যিনি লোহার বাক্সে বন্দী হয়ে কাটাচ্ছেন।

আয়রন ফুসফুস নিয়ে বেঁচে আছেন যারা

পল পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি লোহার ফুসফুসের সাহায্যে বেঁচে আছেন ৭০ বছর। পল আলেকজান্ডারের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কাটে এই লোহার ফুসফুসের মাঝে। তিনি বেঁচে আছেন এই কৃত্রিম ফুসফুসের কারণে। কারণ তার ঘাড় থেকে শরীরের নিচের অংশ প্যারালাইজড তিনি শ্বাস নিতে পারেন না যার কারণে লোহার মেশিনের মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালাতে হয়।

দুর্বিষহ এই যাত্রাটা শুরু হয়েছিল যখন পলের বয়স ছিল ছয় বছর। তখনও পোলিওতে আক্রান্ত হননি তিনি ১৯৫২ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী আকার ধারণ করে পোলিও রোগ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বছরের মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬০ হাজারের বেশি শিশু পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। সেখানকার বিভিন্ন শহরের জনসমাগম স্থানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যেমন সিনেমা হল, সুইমিং পুল ও বার ইত্যাদি।

পল যেভাবে প্যারালাইজড হলেন

পল বলেন তখন তার বয়স ৬ বছর, তিনি বাড়ির পেছনে একটি মাঠে খেলা করছিলেন। হঠাৎ করেই শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ব্যথা শুরু হয়। খেলতে খেলতে খালি পায়েই রান্নাঘরে মায়ের কাছে ছুটে যান তিনি। ছেলের অতিরিক্ত জ্বর ও ঘাড়ের ব্যথার লক্ষণ দেখে পলের মা বুঝেছিলেন এটি পোলিও রোগ।

পরের পাঁচ দিনে পল শরীর নাড়াচড়া ক্ষমতা হারায়। তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু। শ্বাস নিতে পারছিল না শিশু পল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা জানালেন বাঁচার কোন আশা নেই। কিন্তু আরেকজন ডাক্তার এসে প্রায় জোর করেই নিয়ে গেলেন পলকে শেষ চেষ্টা করে দেখবেন। তিনি প্রথমেই অপারেশন করে বের করলেন ফুসফুসের ভেতর জমিয়ে থাকা দূষিত বাতাস।

তারপর লোহার তৈরি কৃত্রিম ফুসফুস এর সাহায্যে শুরু গুলো কৃত্রিম শ্বাসকার্য ।আরো তিন দিন অজ্ঞান হয়েছিলেন পল। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখল বিরাট একটি ঘরে সারি সারি শুয়ে আছে প্রায় ২০ জনের মতো তারই বয়সের ছেলে মেয়ে। প্রত্যেকের গলা থেকে নিচের সমস্ত শরীর লোহার ফ্রেমে আবদ্ধ। দেখতে দেখতে একের পর এক শিশুর মৃত্যু হতে থাকলো তার চোখের সামনে। তবে পল  কুনো রকমের বেঁচে যায়।

পল আলেকজান্ডারের পড়াশোনা

আঠারো মাস পর পল বাড়িও ফিরে এলো। কিন্তু নিজে থেকে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা তখনো তৈরি হয়নি। ভরসা সেই লোহার ফুসফুসের ওপর। প্রতিবন্ধকতা নিয়েও ক্রমশ সুস্থ জীবনে ফিরে আসার লড়াই চালিয়েছে সেই ছয় বছরের শিশু। স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় কিছুদিনের মধ্যেই একটু একটু করে মুখের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতেও শিখেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে বহু কষ্টে কলেজেও ভর্তি হন। তারপর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন।

শুধু তাই নয় ডালাস আদালতে কয়েকটি মামলাও লড়েছেন পল আলেকজান্ডার। আইন ও অন্যান্য বিষয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই। সবগুলো কাজেই এই লোহার সিন্দুকের মধ্যে আবদ্ধ থেকে করেছেন তিনি। সারা বছরে মিনিট পাঁচেকের বেশি লোহার খোলসের বাইরে থাকতে পারেন না তিনি। তবু জীবনের আশা ছেড়ে দেননি। ছুটার মতো মন থাকলে বাধার পাহাড়ও যে পথ ছেড়ে দেয়।

সর্বশেষ কথা

বন্ধুরা আমার অনেকেই আমাদের হাত পা চোখ সবই সুস্থ থাকা সত্ত্বেও আমরা অলসোতায় দিন যাপন করে থাকি। কিন্তু আলেকজান্ডার সেই কাজটি করেনি। তার কৃত্রিম ফুসফুস এর দ্বারা তিনি আইন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন এবং কয়েকটি বইযও তিনি লিখেছেন। এ থেকে বুঝা যায় মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব কিছু করতে পারে এমনকি এভারেস্টের চেয়েও বড় বাধা আসলে তা পায়ের তলায় মিলিয়ে যায়।

 বন্ধুরা পল আলেকজান্ডারের অদম্য মানসিকতা নিয়ে আপনার বক্তব্য আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং পৃথিবীতে এরকম ব্যতিক্রমধর্মী তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি ফলো করুন ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top