ক্রিকেট বিশ্বে অবসরের তালিকা! প্রতিটি বিশ্বকাপের পরেই নিয়ম তান্ত্রিকভাবে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যায় অনেক তারকা ক্রিকেটার।
কেউ কেউ বয়সের ভারে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয় আবার অনেকেই আছেন ইচ্ছে করে কম বয়সেই নিজেদেরকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। মোটকথা প্রতিটি বিশ্বকাপের পরেই আমরা ক্রিকেট দুনিয়া থেকে হারিয়ে ফেলি আমাদের অনেকগুলো প্রিয় মুখকে।
সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ২০২৩ বিশ্বকাপের পরে অবসরে যাওয়া ক্রিকেটারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। চলুন আজকের জেনে নেই কোন কোন ক্রিকেটার ২০২৩ বিশ্বকাপের পর নিজেদেরকে গুটিয়ে নিতে পারেন ক্রিকেট বিশ্ব থেকে তার সংক্ষিপ্ত একটি লিস্ট।
রহিত শর্মা
শুরুতেই ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার রোহিত শর্মার দিকে আমাদেরকে নজর দিতে হবে। দ্য হিটম্যান খ্যাত এই ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৯৮০০ এর উপরে রান আছে।
সেই সাথে সময়ে সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি কে একটা আর্টে পরিণত করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের ইনিংসটিও এসেছে তারই ব্যাট থেকে । ২০০৭ সালে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করলেও ঘটনাচক্রে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন না এই ব্যাটসম্যান। এটা তার জন্য একটা আফসোস হয়ে থাকবে সারা জীবন।
কারণ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকাও যে একটা সম্মানের বিষয়। তবে ২০১৫ এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার পারফরম্যান্স দেখলে আপনাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে রোহিত শর্মা আসলে একটা বিশ্বকাপের দাবি রাখে। এই দুটি বিশ্বকাপে মোট ১৭ টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। নিচে এই দুটি বিশ্বকাপে রোহিতের পারফরম্যান্স তুলে ধরা হলো।
ম্যাচ | ১৭ |
রান | ৯৭৮ |
এভারেজ | ৬৫.২০ |
স্ট্রাইক রেট | ৯৫.৯৮ |
১০০/৫০ | ০৬/০৩ |
২০২৩ সালের বিশ্বকাপ যেহেতু ইন্ডিয়াতে অনুষ্ঠিত হবে। তাই ইন্ডিয়ার জন্য এবারের বিশ্বকাপের ট্রফি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর নিজের শেষ বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে উদযাপন করতে পারলে রোহিত শর্মার ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে যেত।
সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশেই শুধু নয় বরং বাংলাদেশের বাইরেও একজন বিশ্ব সেরা ক্রিকেটার। তবে দুর্ভাগ্য জনক ভাবে ২০২৩ বিশ্বকাপের পরে আমরা তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট স্কোয়াডে নাও দেখতে পারি। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটারের বর্তমান বয়স ৩৬ বছর।
পরবর্তী বিশ্বকাপ আস্তে আস্তে তার বয়স হয়ে যাবে ৪০ বছরের উপরে। ইতোমধ্যেই ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট চার বিশ্বকাপের আসরে নাম লিখিয়েছেন এই ক্রিকেটার। ওয়ানডে বিশ্বকাপে মোট ২৯ টি ম্যাচ খেলে মোট রান করেছেন ১১৪৬। অন্যদিকে বল হাতে উইকেট শিকার করেছেন ৩৪ টি। ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয়-পরাজয়ের কি প্লেয়ার হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিজের যোগ্যতাকে আরো একবার প্রমাণ দিতেও ভুল করেননি।
৮ ম্যাচ খেলে ৫৭ এভারেজে এই আসরে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৬০৬ রান। বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হিসেবে থাকা বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার যদিও বলেছেন তিনি পরবর্তী বিশ্বকাপ প্রজন্তু দেশের হয়ে খেলতে পারেন। তবে আমার মনে হয় না তিনি ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ার আরো বেশি লম্বা করবেন। নিচে সাকিব আল হাসানের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স তুলে ধরা হলো।
ম্যাচ | ২৯ |
রান | ১১৪৬ |
এভারেজ | ৪৫.৮৪ |
স্ট্রাইক রেট | ৮২.২৭ |
১০০/৫০ | ০২/১০ |
মোহাম্মদ নাবি
এবারের বিশ্বকাপের পর আফগানিস্তান থেকেও একজন তারকা ক্রিকেটার নিজের ক্যারিয়ারকে গুডবাই বলার জন্য অলরেডি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। অলরেডি ৩৮ এর কোটায় পা দেয়া আফগানিস্তানের ক্রিকেটার অগ্রদূত মোহাম্মদ নাবি এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর অবসর গ্রহণ করবেন।
আফগান ক্রিকেট বোর্ডকে বর্তমান একটা স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য যেসব প্রথম পর্যায়ের ক্রিকেটার নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তার মধ্যে মোহাম্মদ নাবি সবার আগে শাড়িতেই থাকবেন। একজন অলরাউন্ডার হয়ে ব্যাটিং এবং বোলিং দুই জায়গায় নিজের সামর্থের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও তার কাঁধেই দীর্ঘদিন ছিল আফগান ক্রিকেট দলের নেতৃত্বের ভার।
২০১৫ এবং ২০১৯ মোট দুটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন আফগান এই তারকা। ১৫ ম্যাচ খেলে রান করেছিলেন ১৯৭ অন্যদিকে উইকেট শিকার করেছিলেন ১৩ টি। দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে লড়াই করার মানসিকতা থাকা এই ক্রিকেটারকে হারালে আফগানিস্তান অনেকটা ব্যাগ ফুটে চলে যাবে।
ডেবিট ওয়ার্নার
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বেশ কিছু ক্রিকেটার এবারের বিশ্বকাপের পর নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সড়িয়ে নেওয়ার আকার ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই দিয়ে ফেলেছে। তবে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হচ্ছেন ডেবিট ওয়ার্নার।
অস্ট্রেলিয়া টি টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের ওপেনিং সেকশনের প্রধান ভরসা ডেভিড ওয়ার্নার ২০০৯ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে ডেভিউ করলেও ২০১১ সালের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন না তিনি। তবে ২০১৫ এবং ১৯ এই দুটি আসরে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলেন। খেলেছেন ১৮ ম্যাচ। ৬২ এভারেজে তার ব্যাট থেকে রান এসেছে ৯৯২ আছে ৪টি সেঞ্চুরিও। বর্তমানে ডেভিড ওয়ার্নারের বয়স ৩৬ বছরের উপরে।
যেহেতু অস্ট্রেলিয়া নিজেদের স্কোয়ার্ডে বয়সটাকে একটা ফ্যাক্ট হিসেবে দেখে তাই বলাই যায় ডেভিড ওয়ার্নার না চাইলেও এই বিশ্বকাপেই হতে যাচ্ছে তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। মারকুটে এই ব্যাটসম্যান ক্রিকেট বিশ্ব থেকে হারিয়ে গেলে তাকে মিস করবে অনেকেই। নিচে ২০১৫ এবং ১৯ বিশ্বকাপে ডেবিট ওয়ার্নারের পারফরম্যান্স তুলে ধরা হলো।
ম্যাচ | ১৮ |
রান | ৯৯২ |
এভারেজ | ৬২.০০ |
স্ট্রাইক রেট | ৯৮.১২ |
১০০/৫০ | ০৪/০৩ |
তামিম ইকবাল খান
কাগজে কলমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এখন পর্যন্ত সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খান। ২০২৩ বিশ্বকাপের পরে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন এই ব্যাটসম্যান। সেই ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে অনেক ওপেনার এসেছে আবার চলে গেছে তবে তামিম ইকবালের মত জাতীয় দলে কেউই স্থায়ী হতে পারেনি। তবে বিশ্বকাপের মতো মেঘা আসরে তামিম ইকবালের পারফরম্যান্স একেবারে তলানিতে।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে তামিম ইকবালের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হলেও এখন পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ আসর খেলে ফেলেছেন এই ক্রিকেটার। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোন বিশ্বকাপেই এখনো কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি এই ড্যাসিং ওপেনার। সেই সাথে বিশ্বকাপে তার স্ট্রাইক রেটটাও একেবারেই বাজে।
বিশ্বকাপে ২৯ টি ম্যাচে তামিম ইকবালের সংগ্রহ ৭১৮ রান স্ট্রাইক রেট মাত্র ৭৪। তারপরেও তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা ওপেনার। তবে ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ২০২৩ বিশ্বকাপের পরে নিজের ক্রিকেটিও কেরিয়ার গুটিয়ে নিতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নিচে বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের পারফরমেন্স তুলে ধরা হলো।
ম্যাচ | ২৯ |
রান | ৭১৮ |
এভারেজ | ২৪.৭৬ |
স্ট্রাইক রেট | ৭৪.১২ |
১০০/৫০ | ০০/০৪ |
মার্টিন গাপটিল
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের মধ্যে মার্টিন গাপটিল আছেন এবারের খরচের খাতায়। নিউজিল্যান্ডের এই মারকুটে ব্যাটসম্যান শুধুমাত্র ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ খেলার জন্যই নিজেকে ইনজুরিমুক্ত রাখতে সব ধরনের চেষ্টা করেছেন। বিশ্বকাপের মতো আসরে প্রতিবারই মার্টিন গাপটিল নিউজিল্যান্ডের জন্য সেরা অস্ত্র হিসেবে হাজির হয়ে যান।
তার অভিজ্ঞতা এবং দ্রুত রান তুলার ক্ষমতা তাকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য করে তুলে। বিশ্বকাপের মতো মেঘা আসরে ডাবল হান্ড্রেড প্রাপ্ত এই ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত মোট তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন। ২৭ ম্যাচ খেলে ৪৩ এভারেজে মোট ৯৯৫ রান সংগ্রহ করেন তিনি।
এবারের আসরে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন এই ক্রিকেটার। তবে এই বিশ্বকাপেই হবে তার শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ পরবর্তীতে তিনি যত দ্রুত সম্ভব নিজেকে ইন্টারনেসনাল ক্রিকেট থেকে গুটিয়ে নিবেন। নিচে মার্টিন গাপটিলের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ার তুলে ধরা হলো।
ম্যাচ | ২৭ |
রান | ৯৯৫ |
এভারেজ | ৪৩.২৬ |
স্ট্রাইক রেট | ৮৮.৩৭ |
১০০/৫০ | ০২/০৪ |
বন্ধুরা বিশ্বকাপ পরবর্তীতে আরও অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন যারা নিজেদেরকে আড়াল করবেন। এর মধ্যে রয়েছেন ইন্ডিয়ার রবিচন্দ্র অসীন, রবীন্দ্র জাদেজা এবং বাংলাদেশ থেকে মুশফিকুর রহিম কিংবা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এদের মত ক্রিকেটাররাও ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের লিস্টে থাকা কোন ক্রিকেটারের বিদায় আপনাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিবে সেটা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।