চাঁদের খুব কাছে গিয়েও কেন ব্যর্থ হয় চন্দ্র অভিযান জানেন কি

চন্দ্র অভিযান কেন করা হয়

চন্দ্র অভিযান কেন করা হয়! মানুষ অনেক আগে থেকেই চাঁদের বাহ্যিক সৌন্দর্যে বিমোহিত ছিল তবে শুধু জোছনার আলোয় বিমোহিত হয়ে থেমে যেতে চাইনি তারা।

কি আছে চাঁদের বুকে তা জানতে চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরে। সময়ের সঙ্গে সমৃদ্ধ হয়েছে প্রযুক্তি। তাই গেলো ষাটের দশকে প্রথমবারের মতো চাঁদের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে তৎকালীন দুই সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে প্রথমে কয়েকবারের চেষ্টায় বার বাড়ি ব্যর্থ হয় দুই দেশ।

এরপর মহাকাশ যাত্রায় ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নতি হলেও চন্দ্র অভিযানে ব্যর্থতার ঘটনা ঘটে হর হামেশাই। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য বলছে গেল প্রায় ৬০ বছরে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠানো অভিযানে প্রায় চল্লিশ শতাংশই ব্যর্থ হয়েছে।

প্রথম চন্দ্রা অভিযান

১৯৫৮ সালের আগস্টে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাইওনিয়ার জিরো নামে প্রথম অভিযান পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র তবে উৎক্ষেপণের সময় সে যাত্রায় ব্যর্থ হয় তারা। এর এক মাস পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন লুনা ওয়ান মিশন শুরু করে। তবে ফলাফল একই উৎক্ষেপণের আগেই ব্যর্থ হয় সে যাত্রা।

পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে প্রথম চাঁদের মাটিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা টু মহাকাশযান। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত চাঁদে মোট ৯০টি অভিযান পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চাঁদের উদ্দেশ্যে কোন অভিযান পরিচালনা করেনি দুই দেশের কোন দেশী।

নাসার চন্দ্র অভিযান সার্ভেওর

এর পর ১৯৯০ থেকে আবারও শুরু হয় চন্দ্রা অভিযান। আর এবার এতে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের-সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশ।

তাদের পায়োনিয়ার অভিযানের পর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা শুরু করে রেঞ্জার মিশন। তবে রেঞ্জার ওয়ান থেকে শুরু করে সিক্স পর্যন্ত টানা ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খায় তারা। রেঞ্জারের পর নাসার পরবর্তী অভিযানের নাম ছিল সার্ভেওর। এ অভিযানের বেশিরভাগ যাত্রায় সফল হলেও ১৯৬৬ সালে সার্ভেওর টু ও ১৯৬৭ সালে সার্ভেওর ৪ ব্যর্থ হয়। আর ২০২২ সালে ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের লুনার ফ্ল্যাশ লাইট মিশন।

রাশিয়ার চন্দ্র অভিযান লুনা ২৫

যুক্তরাষ্ট্রের মতো ১৯৫৮ সালে ব্যর্থতা দিয়ে চন্দ্র অভিযানে শুরু করেছিল রাশিয়াও। ১৯৫৯ সালে প্রথম চাঁদের মাটিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা টু মহাকাশযান তবে এরপর থেকে এখন পর্যন্ত লুনা সিরিজের বেশ কয়েকটি চন্দ্র মিশন ব্যর্থতায় পরজি ভূষিত হয়েছে।

এর বাইরে ১৯৬৮ সালে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ার জন সিক্সের মহাকাশযাত্রা। এছাড়াও ব্যর্থতার তালিকায় রয়েছে সইইয়স সেভেনকের বেশ কয়েকটি অভিযানও। ১৯৭৬ সালের পর চলতি বছরের ১১ই আগস্ট আবারও চাঁদের উদ্দেশ্যে মহাকাশযান লুনা ২৫ পাঠান রাশিয়া। তবে অবতরণের ঠিক আগ মুহূর্তে চাঁদের পৃষ্ঠেই আছড়ে পড়ে সেটি।

চন্দ্র অভিযানে অংশগ্রহণ করে যে সমস্ত দেশ

চন্দ্র অভিযানের ব্যর্থতার এই তালিকায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি দেশ। ২০১৮ সালে চীনের লংজিয়ান ওয়ান চাদের কক্ষপথে পৌঁছাতেই ব্যর্থ হয়।

২০১৯ সালে চাঁদের উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান ২ পাঠায় ভারত। চন্দ্র অভিজানের মাধ্যমে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেলেও দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয় তারা। ২০১৯ সালেই প্রথমবারের মত ব্যারেসেট মহাকাশযানের মাধ্যমে চাদের মাটিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালায় ইসরাইল। তবে সেটিও চাঁদের পৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়। ব্যর্থদের এই তালিকায় রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নামোও। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চাঁদে মহাকাশযান রশিদ পাঠালে তা ব্যর্থ হয়।

কেন চাঁদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর ব্যর্থ হয় চন্দ্র অভিযান

মহাকাশ যান গুলো বেশিরভাগই চাঁদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর অবতরণে ব্যর্থ হয়। এর কারণ হিসেবে উঠে আসছে চাঁদের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে অনেক বেশি হালকা।

এতে করে সেখানে প্রবেশের পর দ্রুত পরে যাওয়া ঠেকিয়ে অবতরণের জন্য বিশেষ ধরনের প্রপারেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। আর এই প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন পরে বাড়তি জ্বালানীর। এরপরেও অবতরণের ক্ষেত্রে চন্দ্রযানগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে এতেই ঘটে বিপত্তি।(চন্দ্র অভিযান কেন করা হয়)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top