জার বোমার বিস্ফোরণ হিরোশিমা ও নাগাসাকির চেয়েও ভয়াবহ

জার বোমার ইতিহাস

জার বোমার ইতিহাস! পারমাণবিক অস্ত্রের নাম শুনলে হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে ফেলা এটম বোমার ধ্বংসলীলার ছবি ছাড়া আর কিছু কি মনে আসে। রাশিয়ার তৈরি জার বোমা যদি কখনো যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় তাহলে হিরোশিমা নাগাসাকির বিভীষিকা হয়তো ভুলে যাব আমরা। এমন বিধ্বংসী নিউক্লিয়ার বোমা আর কেউ তৈরি করেনি।

একইসঙ্গে ফিশন আর ফিউশন বোমার এই ভয়ংকর কম্বিনেশন একবারই ব্যবহার করেছিল রাশিয়া। ব্যবহার করছে বলছি, কিন্তু মানুষ মারতে জার বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়নি রাশিয়া। দেশটি পরীক্ষামূলকভাবে বোমাটি ব্যবহার করেছিল স্নায়ু যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দাপটের জবাব দিতে।

জার বোমার ইতিহাস স্ট্যাটিজি হিসেবে ১৯৬১ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞানীদের তৈরি RDS 202 বোমাটি পরবর্তীতে কুজকিনা ম্যাট, বিগ আইডিয়া এবং জার বোমা নামে পরিচিত। ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফাটানো হাইড্রোজেন বোমার জবাব দিতেই জার বোমার ক্ষমতা দেখায় রাশিয়া। প্রথম ডিজাইনে যার বোমাটির ক্ষমতা ৩০০০ হিরোশিমা ও নাগাসাকি বোমার সমান করার পরিকল্পনা ছিল।

কিন্তু দেখা গেল এত ক্ষমতা সম্পূর্ণ বোমা বহনকারী বিমানটি বিস্ফোরণের পর অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসার পর্যাপ্ত সময় পাবে না। তাই বোমাটির ক্ষমতা অর্ধেক করে আনা হয়। ৫০ মেগাটন শক্তির জার বোমার ওজন দাঁড়ায় ২৭ টন মেগাটন। বোমাটির সামনের দিকে মোটা অংশে থাকে গোল একটি নিউক্লিয়ার ফিসন বোমা।

প্লুটোনিয়মের একটি বলকে বেরিলিয়াম মিরর কেসিংয়ে মুড়িয়ে সেটা একটা কেমিক্যাল এক্সক্লুসিভ সিআর এর ভিতরে রাখা হয়। এর পাশেই পুরো বোমাটির দৈর্ঘ্য বরাবর একটি হাইড্রোজেন ফিউশন বোমা থাকে। এতে ফ্লুটোনিয়ামের একটি সিলিন্ডারকে ফিউশন ফুয়েল লিথিয়াম ডিউটো রাইট দিয়ে ঢেকে ইউরেনিয়ামের সিলিন্ডারের ভিতরে রাখা হয়। ফিসন বোমা, ফিউশন বোমা আর জার বোমার খোলসের মাঝের অংশ এসটাইরো ফোমে  ভরা থাকে।

১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর জার বোমাটিকে উত্তর মহাসাগরে অবস্থিত জনহীন নভিয়াস ক্রেমলিয়া দ্বীপের ১০ হাজার ৫০০ মিটার উপর থেকে মডিফাই ট্রিপল এইট ২৯৫ বিমান দিয়ে ফেলা হয়। 8 টন ওজনের প্যারাসুটের সাহায্যে চার কিলোমিটার উচ্চতায় এসে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।

ব্যারোমেট্রিক সেন্সর দিয়ে ফিসন বোমার কেমিক্যাল এক্সক্লুসিভ এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ফিসন বোমার বিস্ফোরণে সূর্যের কেন্দ্রের চেয়েও বেশি ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা তৈরি হয়। এক্স এবং গামা রেডিয়েশনে ফ্রম পরিণত হয় প্লাসমায়। প্লাসমার চাপে এবং তাপে ফিউশন বোমাটি এক্টিভেট হয়।

ফিসন আর ফিউশন রিয়াকশন চলতে থাকে সমানতালে। পুরো ব্যাপারটি এক সেকেন্ডের 600 বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে হয়ে যায়। বিস্ফোরণের সকওয়েবে প্রায় ৮ কিলোমিটার বড় আগুনের গোলা প্রায় দশ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে যায়।

বিস্ফোরণের ঝলকানি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা গিয়েছিল। বিস্ফোরণের সৃষ্ট মাশরুম ক্লাউড মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও সাত গুন উচ্চতায় ওঠে যায়। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের মেসোস্ফিয়ারের মধ্যে চলে যায়। এটি প্রায় ৯৫ কিলোমিটার চওড়া হয়েছিল। জার বোমাটি ফেলার স্থান থেকে অনেক দূরের দেশ নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে বাড়ি ঘরের জানালার কাজ ভেঙে পড়েছিল। ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকা, মানুষের থাট  ডিগ্রী বার্ণের ঝুঁকিতে ছিল। ৫৫ কিলোমিটার দূরে সেভারি দ্বীপের সমস্ত কাঠ ও পাথরের বাড়িঘর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে।

কয়েকশো কিলোমিটার দূরের কাঠের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। তুলনামূলক যেগুলো মজবুত বাড়ি ছিল সেগুলোবাড়ি চাল উড়ে গিয়েছিল। টেস্টিং সাইড থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরে থাকা পর্যবেক্ষক দল বাতাসে থার্মাল ভাইব্রেশন অনুভব করেছিল। বোমাটির প্রভাব ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। জার বোমার ক্ষমতা দেখার পর পুরো পৃথিবীর শমিও আদায় করতে পেরেছিল রাশিয়া। অনেক বেশ এই ধরনের পরীক্ষা না করার জন্য চুক্তির প্রস্তাব দেয় এভাবে যুদ্ধ ছাড়াই সেদিন জয়ী হয়েছিল রাশিয়া।

রাশিয়ার সক্ষমতা

বন্ধুরা আমরা সকলেই জানি পৃথিবীতে যতগুলো পারমাণবিক বোমা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাশিয়ায় রয়েছে। আর এ সমস্ত বোমা দিয়ে পৃথিবীকে কয়েকবার ধ্বংস করা যাবে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে রাশিয়াকে এক ঘরে করে দিচ্ছে এসব দেখে মনে হচ্ছে অতি নিকটে আমাদের সামনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে চলেছে। যেখানে রাশিয়া হয়তো বাধ্য হবে তাদের পারমাণবিক হামলা চালাতে। আর আমরা সকলেই জানি রাশিয়া পারে না এমন কোন কাজ নেই।

যেমন ভাবে রাশিয়া জার বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো বিশ্বকে জানান দিয়েছিল। তারা পৃথিবীর মধ্যে কত বেশি ধ্বংসলীলার চালাতে সক্ষম। রাশিয়ার এই পারমাণবিক হামলা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আর রাশিয়ার নিত্য নতুন সমরাস্ত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top