যুক্তরাষ্ট্রে মাটির নিচে গোপন তেলের ভান্ডার কি করবে এই তেল দিয়ে

যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তেলের ভান্ডার কোথায়! যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পেট্রোলিয়াম তেল বা তেলের ভান্ডার থেকে আরও তেল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তেলের ভান্ডার কোথায়

কেননা সৌদি আরব পুনরায় ১০ লাখ ব্যাড়েল এবং রাশিয়া ৫ লাখ ব্যাড়েল তেল কম উৎপন্ন করবে বলে জানিয়েছে। আর এরই সাথে আবারো বিশ্ব তেলের বাজারে বাড়তে পারে অস্থিরতা। রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই হু হু করে বাড়ছিল তেলের দাম। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে গেল মার্চে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাইডেন প্রশাসন।

বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে গেলো মে মাসে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থেকে ১৮ কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। আর এর মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের পর জরুরী তেলের ভান্ডারের মজুদ সর্বনিম্নে থেকে যায়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত তেলের ভান্ডারে ৪০ কোটি ব্যারেল তেল মজুর আছে। কিন্তু এই তেলে ঠিক কতদিন চলবে এ প্রশ্নের উত্তরের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভের বিস্তারিত তথ্য নিয়েই আজকের এই পোস্টটি আশা করি পোস্টটি স্ক্রিপ্ট না করে পুরটি পরবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল গত তেলের ভান্ডার কোথায় অবস্থিত

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ বা কৌশলগত তেলের ভাণ্ডারটি রয়েছে ভূগর্ভে। বলা যায় একদম সুরক্ষিত একটি জায়গায়। টেক্সাস ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মাটির নিচে লবণের স্তরে একটি গুহায় বানানো হয়েছে এই মজুদাগার। তেলের ভান্ডারে মোট ৭০ কোটি ব্যারেল তেল মজুত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

তবে বর্তমানে এটি পূর্ণ নয় মার্কিন জ্বালানি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জরুরী তেলের ভান্ডারে বর্তমানে ৪০ কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল তেল আছে। অথচ গত বছরের এই সময়ে ৬১ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেলের মজুর ছিল। ১৯৭০ এর দশকে আরোব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তেল সংকটের যেরে জরুরি অবস্থায় জানালানি সরবরাহের লক্ষ্যে এই কৌশলগত তেলের ভান্ডারটি বানানো হয়।

সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নেয়ায় ওপেকের সদস্য ইরাক, কুয়েত, কাতার ও সৌদি আরব ওয়াশিংটনকে তেল দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যুদ্ধ মাত্র তিন সপ্তাহেই থেমে গেলেও নিষেধাজ্ঞাছিল ১৯৭৪ এর মার্চ পর্যন্ত। যে কারণে তেলের দাম বেড়ে যায় প্রায় চারগুণ। পেট্রোল পামগুলোয় দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এরপর এই ভবিষ্যতের সংকট মোকাবেলার চিন্তা থেকেই মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস কর হয় কৌশলগত পেট্রোলিয়াম,.. রিজার্ভ গড়ে তোলা জন্য।

কৌশল গত তেলের মজুদ কি কারনে কমলো

১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জরুরী তেলের ভান্ডার থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়েন। যদিও তখন ১ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করা হয়। বুশ সিনিয়রের ছেলে বুশ হারিকেন ক্যাটরিনার পর জরুরী মজুদের ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রির অনুমতি দেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ও বাজেট ঘাটতি কাটাতে ১৯৯৭ সালে ২ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি করা হয়। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় লিবিয়া থেকে সরবরাহ বিঘ্ন হওয়ায় ৩ কোটি ব্যারেল তেল ছাড়েন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

কিভাবে তেল ছাড়া হয়

তেল পানির চেয়ে হালকা। মজুদ থেকে তেল অপসারণ করার জন্য লবণের গুহাতে পানি পাম্ব করা হয়। আর এর মধ্য দিয়ে অপরিশোধিত তেল পৃষ্ঠে ভেসে ওঠে। আর সেখান থেকেই তেল সংগ্রহ করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশোধনাগারে পাঠানো হয়।

 কার হাতে এই তেল ছাড়ার ক্ষমতা

১৯৭৫ সালের এক আইন অনুযায়ী এই জরুরি তেল ব্যবহারের নির্দেশ শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টেই দিতে পারেন। অবশ্য এখান থেকে তেল বের করা এতটা সহজও নয়। প্রেসিডেন্টের আদেশ পেলে এখান থেকে তেল বের করে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়। কারণ এখানে তেল জমা রাখা হয়েছে অপরিশোধিত আকারে। গাড়ি, জাহাজ বা বিমানে ব্যবহার করতে হলে এই তেলকে আগে শোধনাগারে পাঠিয়ে প্রক্রিয়াজাত করাতে হবে।

 বাইডেন কেন রিজার্ভে হাত দিলেন

সহজ কোথায় চাহিদা এবং যোগানের জন্যই রিজার্ভে হাত দিতে বাধ্য হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের জেরে তেলের বাজার এমনিতেই অস্থির। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। সারা বিশ্বের মত মার্কিন পেট্রোল পাম্পগুলোতেও তেলের আকাশ ছোঁয়া দাম। যুক্তরাষ্ট্রে অপরিষধিত তেলের দাম এ বছর ১০ শতাংশ বেশি। তবে বাইডেনের আশা বাজারে তেল ছারলে হয়তো সেই দাম কিছুটা কমে যাবে। তবে বাইডেনের শেষ পদক্ষেপ কাজ করে কিনা তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল তেল বিশাল একটা পরিমাণ হলেও যুক্তরাষ্ট্র গত বছরে দিনে প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কি পেট্রোলের দাম কমবে

বেশিরভাগ মার্কিনীর প্রশ্ন বাইডিনের এই সিদ্ধান্তে আদৌ কি পেট্রোল পাম্পে এই জ্বালানির দাম কমবে। পেট্রোলের দাম ওঠানামার পেছনে অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করে।

সাধারণত শোধনাগার গুলো আগে থেকেই অপরিশোধিত তেল কিনে নেয়। যাতে তারা পড়ে দাম বাড়লেও সেটা সামাল দিতে পারে। আবার এক এক অঙ্গরাজ্যের আলাদা কর হারের কারণেও পেট্রোলের দামে পার্থক্য দেখা যায়। সব শেষ তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রতি গেলনে ৩.৮৫ ডলার ছিল। গেল মে মাস থেকে যা ১৮ সেন্ড বেশি। দেশটির অনেক অঙ্গরাজ্যের গড় হিসেবে কম থাকলেও উত্তর পূর্বাঞ্চলে অঙ্গরাজ্যগুলোতে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি। আবার এর চেয়েও বেশি দাম পরে পশ্চিমাঞ্চলে যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় গ্যালন প্রতি ৫.৯৪ ডলার। তবে রিজাব ছাড়ার পরেও যদি পেট্রোলের দাম না কমে সেক্ষেত্রে বাইডেন অন্তত রিজার্ভ থেকে তেল বিক্রির চেষ্টা করেছেন বলে যুক্তি দিতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তেলের ভান্ডার কোথায়

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তেলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার

যুক্তরাষ্ট্রের তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বর্তমানে রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণ না করে জ্বালানির বিকল্প উৎসে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য লড়াই করছে। আবার জ্বালানি নির্ভরতা না থাকায় মার্কিন তেল ও গ্যাস শিল্পের ব্যাপক প্রশংসা করছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা। যুক্তরাষ্ট্র একসময় দালানি আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল।

তবে বর্তমানে সে চিত্রটা আর নেই বললেই চলে। বরং অন্য দেশগুলো এখন তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। একইসঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই জ্বালানি খাতে। আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী তেল ও গ্যাস শিল্পে এক কোটির বেশি মানুষ কর্মরত রয়েছে। বিশ্লেষকরা তাই বলছেন কৌশলগত রিজার্ভ থেকে তেল বিক্রির সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আরও জ্বালানি উৎপাদনে সমন্বয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বন্ধুরা যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশ্ব মোড়ল গিরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তেমনভাবে পুরো বিশ্বকে তাঁত লাগিয়ে গড়ে তুলেছিল বিশাল তেলের মজুতদার যা বর্তমান বিশ্বে এক বিরল ঘটনা বলে মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই গোপন তেলের ভান্ডার নিয়ে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে আমাদের সাইটটি ফলো করুন ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top