হজে শয়তানকে ছোড়া লক্ষ লক্ষ পাথর কোথায় যায়

বন্ধুরা প্রতি বছর হজ পালন করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসল্লী মক্কায় যায়। আর এই হজের কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে যেগুলো আল্লাহ আগে থেকেই নির্দেশ দিয়েছে পালন করার জন্য।

হজে শয়তানকে পাথর মারা হয় কেন

এই সমস্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে অন্যতম হলো শয়তানকে পাথর মারা। শয়তানকে পাথর মারা একটি ওয়াজিব ইবাদত হলেও এটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একটি ইবাদত বলে মনে করা হয়। কেননা এর মাধ্যমে শয়তানকে নিজের কাছ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য পাথর ছুরে মারার মধ্য দিয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে জানবো হজে কেন পাথর নিক্ষেপ করতে হয়? পাশাপাশি এত পাথর কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়? আর নিক্ষেপ করা পাথরগুলো পরবর্তীতে কি করা হয়? তাহলে বন্ধুরা চলুন কথা না বাড়ি শুরু করি আজকের পোস্টটি।

হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি ।বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমের আবেগ ও ভালোবাসার আরেক নাম হলো হজ। হজের অন্যতম আনুষ্ঠানিকতা হল জামারতে শয়তানের তিনটি প্রতীক স্তম্ভে ৪৯ বার ৭০টি নুড়ি পাথর ছুড়ে মারা। এবছর বিশ্ব থেকে ১৬০ টি দেশের প্রায় ৩০ লাখ এরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লী নিক্ষেপ করেছেন ১০ কোটিরও বেশি নুরি পাথর। অনেকের জিজ্ঞাসা প্রতি বছর হাজিরা যেসব পাথর নিক্ষেপ করেন সেগুলো কোত্থেকে আসে এবং হজের পর কোথায় যায় বা এসব পাথর দিয়ে কি করা হয়।

১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ

সৌদি গেজেট জানায় ১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সব হাজী মিনা প্রান্ত ছেড়ে চলে যান। তারা চলে যাওয়ার পর শুরু হয় পাথর সংগ্রহ প্রক্রিয়া। হাজিরা জামারায় যেসব পাথর নিক্ষেপ করে সেগুলো চলে যায় ১৫ মিটার নিচে এবং জমা হয় বেসমেন্টে। এরপর একটি বিশেষ বেল্টের সাহায্যে  সিভিং প্রক্রিয়ায় নিক্ষিপ্ত সব পাথর সংগ্রহ করা হয়। এরপর পানির স্প্রে করে পাথরের গায়ে জমে থাকা ধুলো ও ময়না দূর করা হয়। গাড়িযোগে প্রায় ১,০০০ টন পরিস্কার পাথরগুলো সরকারি গোডাউনে নিয়ে গিয়ে পরবর্তী হজের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। সৌদি আরবের আবাসন প্রতিষ্ঠান কিদানা ডেভলপমেন্ট এর সহযোগিতায় মক্কা ভিত্তিক সংস্থা গিফট চারিটি অয়েল অ্যাসোসিয়েশন পাথর পুনর ব্যবহারের প্রক্রিয়াসহ হজের স্থানগুলোর উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে।

হজে শয়তানকে পাথর মারা হয় কেন

এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মিনায় জামারত ব্রিজ সংলগ্ন এবং মুজদালিফায় প্রায় ৩০০ টির বেশি পয়েন্টে হজ যাত্রীদের পাথর ভর্তি থলে সরবরাহ করা হয়। এ বছর হজমৌসুমে সরবরাহ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৪১১ বস্তা নুরি।

হজে পাথর নিক্ষেপ করা হয় কেন

হজের সময় শয়তানকে পাথর মারা ওয়াজিব। ইব্রাহিম আলাই সালাম যখন শিশু পুত্র ইসমাইল আঃ কে কুরবানী করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল যেন কুরবানী বাধাগ্রস্ত হয়। তখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ৩ স্থানে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে শয়তানকে বিতরণ করেছিলেন এবং আল্লাহর আদেশ পালনে সন্তানকে মাটিতে শায়িত করেছিলেন। স্মৃতি বিজড়িত সেই ঘটনাকে চির জাগ্রত রাখার জন্য কঙ্কর নিক্ষেপকে হজের বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আল্লাহর কাছে গৃহীত হজ

প্রতিবছর লাখ লাখ মুসল্লী মক্কায় হজ করতে যায় ঠিকই কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহতালা তার প্রিয় বান্দার হজটুকু কবুল করে নেয়। এক হাদিসে এসেছে শয়তানকে পাথর মারার স্থানে যে সমস্ত পাথর পড়ে থাকে তারা হলো হতভাগা। কেননা আল্লাহতালা বলেছেন যে সমস্ত হাজীদের হজ আল্লাহর কাছে কবুল হবে ওই সমস্ত হাজীদের পাথর আল্লাহ আসমানে তুলে নিবেন। আর যে পাথরগুলো নিচে পড়ে থাকবে তারা হলো হতভাগা। তারমানে তাদের হজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

এজন্য আমরা যখন হজ করতে মক্কায় যাব অবশ্যই আমাদের অতীতের গুনাহ খাতাগুলো আল্লাহর কাছে মাফ করার উদ্দেশ্যে যাবো সম্মানের উদ্দেশ্যে নয়। কেননা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা মানুষের মনের কথা সবই জানেন তাই আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে তার ইবাদতে মনোযোগী হব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top